মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলতে বৈষ্ণবনগরে রাজ্যপাল, ক্যাম্পের বাইরে বিক্ষোভ স্থানীয়দের !


ওয়াকফ অশান্তিতে তোলপাড় দেশ তথা রাজ্য রাজনীতি। মুখ্য়মন্ত্রীর 'আপত্তি' উড়িয়েই এদিন মালদায় পৌঁছে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলতে বৈষ্ণবনগরে যান রাজ্যপাল। এদিকে হঠাৎ ক্যাম্পের বাইরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে স্থানীয়রা। 'কেন সংবাদমাধ্যমকে ক্যাম্পে ঢুকতে বাধা পুলিশের?', প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের। 

মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উড়িয়ে দাঙ্গায় ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করতে মালদার ত্রাণশিবিরে পৌঁছে দাঙ্গায় ঘরছাড়াদের মুখ থেকেই তাঁদের যন্ত্রণার কথা শুনতে মালদায় রাজ্য়পাল। তবে শুক্রবার সন্ধেয় তিনি ক্য়াম্পে পৌঁছোতেই সেখানে তৈরি হয় ধুনধুমার পরিস্থিতি। ঘরছাড়াদের মাঝে বসে, তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনে, ক্ষোভ উগরে দেন সি ভি আনন্দ বোস।এদিন রাজ্য়পাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন, 
'কোনও সভ্য় সমাজ এই ঘটনা মানতে পারে না। ভয় নিয়ে কেউ বাঁচতে পারে না। আইন হাতে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। আমি রাজ্য় সরকারকে ও ভারত সরকারের নির্দিষ্ট জায়গায় জানাব।' 

রাজ্য়পাল মালদার ক্য়াম্পে পৌঁছনোর পর, কেন সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হল না? এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ উগরে দেন সেখানে আশ্রিতদের একাংশ। পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় তুমুল বচসা। ব্যারিকেড ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা চাই মিডিয়া ভিতরে যাক। ভিতরে কী হচ্ছে, রাজ্যপাল ওঁদের কী ভরসা দিচ্ছেন, ওটা আমরা জানতে চাই।' মুর্শিদাবাদে দাঙ্গার শিকার ঘরছাড়া মানুষগুলোর কথা, তাঁদের মুখ থেকে শুনতে, দিল্লি সফর কাটছাঁট করে বৃহস্পতিবার সকালেই কলকাতায় ফেরেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। 
 
ঘোষণা করেন দাঙ্গা-বিধ্বস্ত এলাকায় যাওয়ার কথা। যদিও, রাজ্যপালকে আপাতত মুর্শিদাবাদ না যেতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন, আমি অনুরোধ করব এই মুহূর্তে পরিস্থিতি কেউ (রাজ্যপাল) যেন আমরা গিয়ে, স্থানীয়রা ছাড়া, আর পরিস্থিতিটা যেন কেউ... কী বলব,যে শান্তির বাতাবরণ ফিরে এসেছে, যে...এখন মানুষের কাছে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে কনফিডেন্সটা বিল্ড আপ করা। সেই কাজটা প্রশাসন করছে। তা নাহলে আমি নিজেও যেতে পারতাম। আমি যাচ্ছি না কেন?'
 
কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উড়িয়ে, শুক্রবার সকালেই মালদার উদ্দেশে রওনা দেন সি ভি আনন্দ বোস। শিয়ালদা থেকে বিশেষ ট্রেন ধরেন তিনি। দুপুর ৩.২০ নাগাদ মালদা টাউন স্টেশনে পৌঁছয় ট্রেন।কিছুক্ষণ মালদা সার্কিট হাউসে থেকে বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইসকুলের ক্য়াম্পে পৌঁছে যান সি ভি আনন্দ বোস।কিন্তু রাজ্যপাল ত্রাণ শিবিরে ঢোকার পরই শুরু হয় উত্তেজনা। রাজ্য়পালকে কাছে পেয়ে যন্ত্রণা-ক্ষোভ উগরে দেন আক্রান্তরা। রাজ্য়পাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন,' ওঁরা যেটা বিস্তারিত জানিয়েছেন, বিশেষ করে মহিলারা ঘর ছাড়া হয়েছিলেন। খুবই দুঃখজনক...কোনও সভ্য সমাজে হয় না। ওখানে যা হয়েছে, বাংলায় এরকম কখনও হয়নি। এঁদের দ্রুত ফেরাতে, নিরাপত্তা দিতে, পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সবরকমের সহযোগিতা দিতে জন্য কড়া পদক্ষেপ নেব।'

মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উড়িয়ে রাজ্যপাল মালদা যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, রাজ্যপাল দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে। গন্ডগোল করানো হয়েছে।এখন জীবন ছন্দে ফিরছে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেতে পারতেন না?? প্রশ্ন কুণালের। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তো হাথরস বা মণিপুরে হলে নিজের টিমকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রাজ্যে যখন কোনও ঘটনা হয়, বিরোধীরা যদি যেতে চায় তখন উনি চান না যে বিরোধীরা যাক। উনি চাইবেন না যে সত্যি কথাটা বাইরে আসুক। 
রাজ্যপাল মালদা যাওয়া নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন অধীর চৌধুরী।

কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, 'এমন কিছু যেন বার্তা না যায়, যে সাংবিধানিক পদের অপব্যবহার করে কোথাও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনর্বহালের পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতির বার্তা যাচ্ছে, এটা যেন না হয়। দ্বিতীয় কথা, যাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের জন্য আমরাও দুঃখিত। কিন্তু তাঁদেরকে একটা জায়গায় গচ্ছিত রেখে রাজনীতি করাও বন্ধ হোক।'রাজনৈতিক তরজা চলছেই। কিন্তু গরিব মানুষগুলো কবে আতঙ্ক কাটিয়ে নিজভূমে ফিরতে পারবেন?