![]()
কলকাতা শহর আর বৃষ্টি—দু’টি শব্দ যেন যুগ যুগ ধরে হাত ধরে হাঁটে। কখনও বৃষ্টি ভালোবাসা হয়ে আসে, কখনও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। আবহাওয়া দপ্তরের তরফে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘Red Alert’ জারি হয়েছে তীব্র বৃষ্টির সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে। আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় শহর জুড়ে হতে পারে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত, যার ফলে জলাবদ্ধতা, যানজট, এবং নাগরিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।
🌩️ আবহাওয়া অফিস কী বলছে?
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হয়েছে একটি গভীর নিম্নচাপ। এটি ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং কলকাতার ওপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
প্রধান সতর্কতা গুলি:
-
প্রতি ঘণ্টায় ৫০-৭০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে
-
দিনে ১০০-১৫০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে
-
নিকাশি ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল
🚧 প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন
কলকাতা পৌরসংস্থা, কলকাতা পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ইতিমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে আছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
-
শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে জল নিষ্কাশন পাম্প বসানো হয়েছে
-
জল জমার প্রবণ এলাকাগুলোর জন্য আলাদা নজরদারি দল গঠন করা হয়েছে
-
স্কুল ও কলেজগুলিকে অনলাইনে ক্লাস চালানোর পরামর্শ
-
হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে জরুরি যোগাযোগের জন্য
-
বাসস্ট্যান্ড, মেট্রো স্টেশন ও হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন
🚗 শহরের রাস্তায় কী অবস্থা?
কলকাতার চিরচেনা সমস্যা—জল জমা রাস্তা ও ট্রাফিক জ্যাম। রবীন্দ্র সদন, শেক্সপিয়ার সরণি, বেহালা, টালিগঞ্জ, কাশিপুর, নিউ আলিপুর, ও টালতলার মত অঞ্চলগুলিতে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু জল। Heavy rain warning-এর খবরে নাগরিকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক বার্তা:
-
প্রয়োজনে ঘর থেকে না বেরোন
-
যান চলাচলের লাইভ আপডেট পেতে ট্রাফিক অ্যাপে নজর রাখুন
-
গাড়ি চালাতে গিয়ে জল জমা রাস্তায় ঢোকার আগে চিন্তা করুন
🧓 বৃদ্ধ শহর, ক্লান্ত ড্রেনেজ
কলকাতার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বহু পুরনো। কিছু কিছু অঞ্চল এখনও ব্রিটিশ আমলের নিকাশি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ফলে একটানা ভারী বৃষ্টিপাতে জল বেরোতে সময় লাগে, এবং এই ফাঁকে শহর যেন থমকে যায়।
💬 নাগরিকের অভিজ্ঞতা
“ঘরে বসে বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু বারান্দায় জল ঢুকে গেলে আনন্দ আর থাকে না।”
— সায়ন্তনী ঘোষ, গড়িয়া
“বাসে ৪ ঘণ্টা বসে থেকে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছি। বেহালার রাস্তায় হাঁটু জল। প্রতি বছর এটা কেন হয়?”
— রাকেশ দত্ত, বেহালা
📱 কী করবেন এই সময়ে: নাগরিকদের জন্য পরামর্শ
✅ আবহাওয়ার আপডেট মোবাইল অ্যাপে দেখে রাখুন
✅ ঘরে মোমবাতি, ব্যাটারি, ও শুকনো খাবার মজুত রাখুন
✅ বিদ্যুৎ গেলে মোবাইল চার্জ রাখার ব্যবস্থা করুন
✅ রাস্তায় বেরোলে জলপ্রতিরোধক জুতো ও রেইনকোট ব্যবহার করুন
✅ শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষভাবে সাবধানে রাখুন
🧠 শেষ কথা: এই শহর জানে কিভাবে টিকে থাকতে হয়
কলকাতা যতই ভোগান্তিতে পড়ুক, শহরটা জানে কীভাবে লড়াই করতে হয়। এই তীব্র বৃষ্টির হুমকির মধ্যেও আছে প্রতিবাদের ধ্বনি, আছে ভালোবাসা, আছে ঐক্য। সময় থাকলে জানালার পাশে বসে এক কাপ চা নিয়ে এই বৃষ্টিকে একটু উপলব্ধি করে দেখুন—প্রকৃতির এই রূপে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য শক্তি।
📢 আপনার মতামত দিন!
আপনি কি এই বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় বেরিয়েছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
নিচে কমেন্টে লিখে জানান — এই শহরের গল্প আপনার চোখেও শুনতে চাই!